মাথা ঘোরা রোগী মনে করে, গোটা পৃথিবী যেন ঘুরছে। অথচ পৃথিবী নয় বরং নিজেই ঘুরছে। ভাবছেন হয়তো কোনও কারণে প্রেশার লো হয়ে গেছে। এমনটা কেন হচ্ছে খুঁজে পাচ্ছেন না। মূলত মাথা ঘোরা কিংবা মাথা ঝিমঝিম করাকে ভার্টিগো বলা হয়।
যদিও এই ভার্টিগো কোনও মেডিকেল অবস্থা নয়। বরং বলা চলে, কোনও রোগের উপসর্গ হতে পারে। কিন্তু রোগ ছাড়া যদি আপনি ক্রমাগত মাথা ঘোরা বা মাথা ঝিমঝিম করার সম্মুখীন হন, তাহলে সচেতন হওয়া জরুরি। অনেক সময় মানসিক চাপের কারণেও আপনি এই সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন।
প্রকৃতপক্ষে, অর্থোস্ট্যাটিক এবং পোস্টুরাল হাইপোটেনশনের কারণে হঠাৎ ভার্টিগো হতে পারে যা নিম্ন রক্তচাপের একটি লক্ষণ। এটি কখনও কখনও আপনার হঠাৎ দাঁড়ানো বা গতির পরিবর্তনের কারণে ঘটতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, কয়েক সেকেন্ডের বেশি মাথা ঘোরা গুরুতর অসুস্থতার লক্ষণ হতে পারে। ভার্টিগো যে কোনো মানুষের হতে পারে, তবে এটি ৬৫ বছরের বেশি বয়সি মানুষের মধ্যে খুবই সাধারণ।
কারণ বয়সের সঙ্গে সঙ্গে রক্তনালীগুলো দুর্বল হয়ে যায়। দুর্বল রক্তনালী মানে আপনার মস্তিষ্কের কোষ পর্যাপ্ত অক্সিজেন পাচ্ছে না এবং এই অবস্থা মাথা ঘোরা এবং ব্ল্যাক আউট হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে। দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় মাথা ঘোরার কয়েকটি কারণ মিলিয়ে নিন, সেই সঙ্গে কোন পরিস্থিতিতে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত সেটাও জেনে নিন-
মাথা ঘোরার কারণ
যদিও সাধারণ মাথা ঘোরা এবং ভার্টিগোর মধ্যে সূক্ষ্ম ফারাক রয়েছে। ভার্টিগো হল এমন এক ধরণের মাথা ঘোরা যেখানে মনে হয় যে স্থির থাকা সত্ত্বেও চারপাশের পরিবেশ যেন ঘুরছে। অন্যদিকে, মাথা ঘুরলে শরীরের ভারসাম্যহীনতা বোধ হয়।
এই অবস্থার সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণগুলো হলঃ
হালকা মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, বমি, কানে শুনতে সমস্যা, নড়াচড়া করার সময় দেখতে অসুবিধা এবং অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। ভার্টিগোর সমস্যা মানসিক চাপের কারণেও দেখা দিতে পারে। স্ট্রেস এবং ভার্টিগোর সরাসরি সংযোগ নেই তবে স্ট্রেস ভার্টিগোর একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। স্ট্রেস ভেস্টিবুলার সিস্টেমের কর্মহীনতায় একটি ভূমিকা পালন করতে পারে এবং ভেস্টিবুলার সিস্টেমের যে কোনো ক্ষতি মাথা ঘোরার দিকে পরিচালিত করতে পারে।
অর্থাৎ সরাসরি না হলেও স্ট্রেস ভার্টিগোকে ট্রিগার করে। আসলে আমরা যখন মানসিক চাপের মধ্যে থাকি, আমাদের শরীরে কর্টিসল নামক স্ট্রেস হরমোন উচ্চ পরিমাণে নি:সরণ হতে থাকে। এই হরমোন ভেস্টিবুলার সিস্টেম থেকে মস্তিষ্কে নিউরাল তথ্য প্রেরণের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এই হরমোনগুলি তখন মস্তিষ্কের নিউরোট্রান্সমিশনের
ওপর বাধা সৃষ্টি করতে পারে যার কারণে মাথা ঘোরা অনুভব হয়।
অন্যদিকে, মানসিক চাপের কারণে হিস্টামিন এবং নিউরোস্টেরয়েডগুলিও নি:সরণ হয়। এগুলোও একইভাবে নিউরোট্রান্সমিশনকে প্রভাবিত করে যা মাথা ঘোরার জন্য দায়ী। যদি স্ট্রেস আপনার জন্য ভার্টিগোর কারণ হয়ে থাকে, তাহলে এই ক্ষেত্রে মানসিক চাপ কমানো ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।
যেভাবে প্রতিরোধ করবেন
মানসিক চাপ কমানোর জন্য আপনি গান শুনতে পারেন, ধ্যান করুন। যোগব্যায়াম করলেও মানসিক চাপ কমতে পারে। ক্যাফেইন যুক্ত খাবার ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজন মানসিক অবস্থা সম্পর্কে পরিবার বা বন্ধুদের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করতে পারেন। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা মনোবিদের সঙ্গে কথা বললেও আপনি সাহায্য পেতে পারেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।